নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে সালেম নূর নামে এক সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসূল তাবরীজ।
শুধু তা-ই নয়, মা ও স্ত্রীর সামনেই ইউএনওর দেহরক্ষী ও অফিসের কর্মচারীরা তাকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই সাংবাদিক।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইউএনও অফিস কক্ষেই এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। মারধর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় সালেম নূরকে।
মারধরে আঘাত সংবলিত কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সালেম নূর কক্সবাজারে স্থানীয় দৈনিক আপন কণ্ঠ পত্রিকা ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম প্রহর পত্রিকার প্রতিনিধি। মারধরে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
ভুক্তভোগী সালেম নূর অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসূল তাবরীজের ব্যক্তিগত সহকারী মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে বুধবার বিকেলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। ওই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর সন্ধ্যার ৬টার দিকে ওই দেহরক্ষী ইউএনওর বরাত দিয়ে ফোন করে সালেম নূরকে এক ঘণ্টার মধ্যে ইউএনও অফিসে যাওয়ার জন্য বলেন। ফোন পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানে যান সালেম নূর।
ইউএনও অফিসে গেলেই সৈয়দ শামসূল তাবরীজ, তার ব্যক্তিগত, কর্মচারী, ইফাত ও কাজল, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার ওসমান গণি তাকে রাবারের পাইপ দিয়ে পেটান।
খবর পেয়ে সালেম নূরে স্ত্রী ও মা সেখানে যান। তাদের সামনেও সালেম নূরকে বেড়ধক পেটানো হয়। এ সময় তার মা ইউএনওর পায়ে ধরে ক্ষমা চান বলে দাবি করেন সালেম। তবু ছাড় দেওয়া হয়নি।
মারধর করে ‘ভবিষ্যতে ফেসবুকে এমন পোস্ট দেবেন না’ মর্মে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। স্বাক্ষর দিতে না চাওয়ায় ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন সালেম নূর।
মারধরের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসূল তাবরীজ। তিনি বলেন, সালেম নূরের সঙ্গে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার ওসমান গণির একটি মামলা ইউএনও অফিসে চলমান রয়েছে। মামলাটির কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলমান রয়েছে। কিন্তু তা না মেনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের কর্মচারীকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছেন সালেম নূর।
সৈয়দ শামসূল তাবরীজ বলেন, এই স্ট্যাটাসের সত্যতা জানার জন্য সালেম নূরকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে মারধর করা হয়নি। মারধরের আঘাত সংবলিত যে ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হয়, সেগুলো আদৌ প্রকৃত ছবি নয় বলে দাবি করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, আমি শুধুমাত্র ছবিগুলো মুছে দিয়েছি। মারধরের বিষয়টি সঠিক নয়। তাহলে কারা মেরেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেন নি।
ভুক্তভোগী সালেম নূর বলেন, আমার মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তা আমলে নেননি তিনি। আমি অপরাধ করে থাকলে তিনি মামলা দিতে পারেন, জেলে দিতে পারেন। কিন্তু মারধরের এখতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেই। আমি এর বিচার চাই।
পাঠকের মতামত: